প্রত্যয় নিউজডেস্ক: ১৪ না ৭ দিন কোয়ারেনটাইন? তা নিয়ে চলছে দরকষাকষি। নিজ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কড়াকড়ি মেনে শ্রীলঙ্কান বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, আইসিসি টেস্ট চ্যাস্পিয়নশিপ খেলতে শ্রীলঙ্কা গিয়ে ১৪ দিন হোটেল থেকে বের হওয়া চলবে না। প্র্যাকটিস তো বহুদুরে, থাকতে হবে পুরোপুরি আইসোলেশনে।
লঙ্কানদের ওই প্রস্তাব মেনে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার অর্থ, দেশে যত রকমের প্রস্তুতিই নেয়া হোক না কেন, শ্রীলঙ্কা গিয়ে দুই সপ্তাহ হোটেলে থেকে টেস্টের আগে আবার নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে; কিন্তু বিসিবি সে প্রস্তাবে রাজি নয়। নাজমুল হাসান পাপনও সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছেন।
আর তা নিয়েই চলছে দেন দরবার। লঙ্কানরাও অনঢ়, বিসিবিও একচুল সরতে নারাজ। দু’পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় বলেই কোন সমাধান আসছে না। আর তারচেয়ে বড় কথা লঙ্কানরাও কোন যোগাযোগ করছে না। যা গতকাল বুধবার বিকেলে খোদ বিসিবি সিইও স্বয়ং মুখ ফুটে জানিয়ে দিয়েছেন।
আর সব মিলে তাই সফরটাই অনিশ্চয়তার দোলাচালে দুলছে। বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন সুজন কাল বুধবার আরও একটি কথা বলেছেন। যার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেক।
তিনি বলেছেন, এখন যা অবস্থা তাতে করে লঙ্কানরা যদি আজ-কালের ইতিবাচক প্রস্তাবও দেয়, সফর নিয়ে অনিশ্চয়তার সব কালো মেঘ যদি কেটেও যায়, তাও পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া খুব কঠিন। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের মাটিতে অনুশীলন করা এবং সোনারগাঁ প্যানপ্যাসিফিকে চেকইন করা, ভিনদেশি কোচদের নিয়ে অনুশীলনসহ জাতীয় দল কবে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে? তাও আগে থেকেই ঠি করা।
সেই মতোই চলছিল প্রস্তুতি। অন্যসব কাজ কর্ম চলছে লক্ষ্য ও পরিকল্পনামত। দল ঘোষণা না হলেও ২৭ জনের প্রাথমিক দল নিয়ে চলছে অনুশীলন। এরই মধ্যে দুই দফা করোনা টেস্টও করানো হয়ে গেছে। আজ ২৪ সেপ্টেম্বর আবার করোনা টেস্ট করার কথা। আর ২৭ সেপ্টেম্বর কলম্বো যাত্রার দিন-তারিখ ঠিক করা।
কিন্তু ভেতরের খবর, সেই দিন শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আজ-কালের মধ্যে একটা রফা হয়ে গেলেও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার প্রস্তুতিতে শ্রীলঙ্কা যাওয়া কঠিন। আর তাই বিসিবি সিইও গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা যাওয়াটাও চ্যালেঞ্জিং।’ মোটকথা, এটা বলেই দেয়া যায় যে, দু’পক্ষের মধ্যে আজ-কালের মধ্যে আপোষ রফা হলেও পূর্ব নির্ধারিত সময়, মানে ২৭ সেপ্টেম্বর টাইগারদের শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
ওদিকে লঙ্কান বোর্ড শুধু কোয়ারেন্টাইন ইস্যুই নয়, এমনকি সফর সূচিও চূড়ান্ত করেনি। বিসিবির কাছে প্রস্তাবিত কোন ট্যুর সিডিউলও পাঠানো হয়নি তারা। তিন ম্যাচের টেস্ট কবে কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সে সূচি এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
এতকাল শোনা গেছে, ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রথম টেস্ট। প্রথম দুটি টেস্ট হবার কথা ক্যান্ডিতে। আর শেষ টেস্ট হবার কথা কলম্বোতে।
কিন্তু একটি দায়িত্বশীল সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত যদি সফর হয়ও তাহলে হয়ত সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এমনকি টেস্ট ম্যাচের সংখ্যাও কমে যেতে পারে।
আর সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজও পিছিয়ে যেতে পারে। মানে আগে যেটা অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শুরুর কথা ছিল, সেটা নাকি মাস খানেক পিছিয়ে যেতে পারে। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। লঙ্কান বোর্ডের কাছ থেকে নাকি এমন প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা আছে। লঙ্কান ঘরোয়া ক্রিকেট ঠিক রাখতেই নাকি এমন চিন্তার উদ্ভব ঘটেছে।
শেষ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন ইস্যুতে বিসিবি আর লঙ্কান বোর্ডের ভিতরে আপোষ মিমাংসা হলেও টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফর পিছিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সে সম্ভাবনা যে আছে , তারও একটা আভাস ইঙ্গিত মিলেছে গতকাল বিসিবি সিইওর মুখে। তিনি বার তিনেক বলেছেন , ‘লঙ্কান বোর্ড আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে কথা বললে আমরা পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে অ্যাডজাস্ট করতেও প্রস্তুত।’ এই অ্যাডজাস্ট মানে হয়ত সিরিজের সময় ও সূচিই বুঝিয়েছেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী।